চবির সম্মৃদ্ধ লাইব্রেরি, তবুও বিমুখ শিক্ষার্থীরা!
পরিসর.কম
প্রকাশিত : ০৪:০৩ এএম, ২৯ মে ২০১৭ সোমবার | আপডেট: ১২:৪৯ পিএম, ২৯ মে ২০১৭ সোমবার

চবির সম্মৃদ্ধ লাইব্রেরি, তবুও বিমুখ শিক্ষার্থীরা!
বেলা ১২টা। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ছাত্র-ছাত্রীর জন্য বরাদ্দ মোট ৩৬৬ টি আসনের বিপরীতে ২৪ জন শিক্ষার্থী লাইব্রেরি ব্যবহার করছেন। শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ ২১ আসনের কোনোটিতে কাউকে দেখা গেল না। লাইব্রেরির থেকে বের হচ্ছিলেন এক শিক্ষার্থী –
‘আপনি কি লাইব্রেরিতে নিয়মিত আসেন?’
‘না, মাঝেমাঝে আসি, সাধারণত পরীক্ষার সময়।’
‘নিয়মিত নয় কেন?
‘আসলে লাইব্রেরি থেকে বই নেয়া বেশ জটিল ও সময়-সাপেক্ষ। তাছাড়া বিকেল পর্যন্ত ক্লাস থাকে ততক্ষণে লাইব্রেরির কম্পিউটার সেকশন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ডিজিটাল কোড খুঁজে বই নেয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া পাঠকক্ষের দায়িত্বরতদের গা-ছাড়া ভাব তো আছেই। এসব কারণে লাইব্রেরিতে যেতে ইচ্ছে করে না,’ আক্ষেপের সুর ছাত্রীটির কণ্ঠে।
প্রায় ৫৭ হাজার বর্গফুটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। তাকে-তাকে সাজানো প্রায় চার লাখ বই। চল্লিশ হাজার জার্নাল, রয়েছে বিপুল সংখ্যক দুষ্প্রাপ্য রেফারেন্স বই, আরও অনেক প্রকাশনা।
সুসজ্জিত পাঠকক্ষ। চেয়ার টেবিল সাজানো। পাঠের জন্য নিরব পরিবেশ। কিন্তু লাইব্রেরিতে ঢুকলেই দেখা যাবে এত আয়োজনের পরেও পাঠক নেই।
লাইব্রেরি থেকে পাওয়া তথ্যমতে, দিনে গড়ে লাইব্রেরি ব্যবহারকারী মোট ৩৪৭ জন। এর মধ্যে সকালের ভাগে গড়ে ২২৯ জন। বিকেলে মাত্র ১১৮ জন শিক্ষার্থী লাইব্রেরি ব্যবহার করেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। এর মধ্যে আবাসিক হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার।
লাইব্রেরির এত আয়োজনের পরেও শিক্ষার্থীরা কেনো লাইব্রেরি বিমুখ। সে প্রশ্নের নানা উত্তর মিলেছে।
‘ক্লাশ শেষে শাটল ট্রেন ধরার তাড়ার কারণে ইচ্ছা থাকলেও লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারি না,’ বলছিলেন এক শিক্ষার্থী। জানালেন, শাটল ট্রেন মিস করলে শহরের শিক্ষার্থীদের বাসায় ফেরার ভোগান্তি হয়ে পড়ে সীমাহীন।
আরেকজন জানালেন, ক্লাস যখন শেষ হয়, লাইব্রেরির কম্পিউটার সেকশনটিও বন্ধ হয়ে যায় তখনই। ফলে ডিজিটাল কোড নিয়ে বই তোলা ও পাঠ সম্ভব হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন না হওয়ায় কাঙ্খিত সেবা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিলছে না লাইব্রেরিতে। তাই লাইব্রেরি তাদেরকে খুব একটা টানে না।
শাটল ট্রেন যাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় সেই আবাসিক শিক্ষার্থীদের মুখে শোনা গেলো অন্যকথা।
তারা জানান, বিভাগের সিনিয়রদের ট্রেডিশনাল নোট, সেমিনার-লাইব্রেরি ও ব্যক্তিগতভাবে ইন্টারনেট সুবিধা ব্যবহার করে মোটামুটিভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যান। লাইব্রেরিতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
এ নিয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ আবু তাহেরের সঙ্গে। তার দাবি লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষার্থীই আসে। কম শিক্ষার্থী আসার অভিযোগ সত্য নয়। তবে তিনি এ কথা স্বীকার করেন যে, অপর্যাপ্ত জনবলের কারণে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সেবা দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এদিকে, এ ব্যাপারে লাইব্রেরির সহকারী রেজিস্ট্রার সাইফুর রহমান সাগর দুষলেন শিক্ষার্থীদেরকেই। তার মতে, জীবন-যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট-টিউশন থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজও করতে বাধ্য হয়। এছাড়াও ফেসবুকসহ অন্যান্য অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাটে তাদের সময়। ফলে তারা বেশিসময় লাইব্রেরিতে দিতে পারছে না।
লাইব্রেরির কম্পিউটার সেকশনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে চারটি কম্পিউটারের দু’টিতে দু’জন কাজ করছেন। বাকি দু’টির একটি কম্পিউটার শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ। অন্যটির মোড়ক এখনও খোলা হয়নি। কর্মচারিদের অভিমত, কর্মচারি সংখ্যা আরও দু’জন বাড়ালে সকালের মত বিকেলে তিনটার পরও কম্পিউটার সেকশন চালু রাখা সম্ভব হবে।
সমাধান কী?
এসব সমস্যার সমাধান কী হতে পারে? জানতে চাইলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বললেন, দরকার সমন্বয়। ক্যাম্পাস হতে শহরগামী শাটল ট্রেনের সাথে লাইব্রেরির সময়সূচির সমন্বয় করা প্রয়োজন। একইসাথে লাইব্রেরির কম্পিউটার সেকশনে দক্ষ জনবলের পাশাপাশি বিকেলের শিফটও চালু রাখা দরকার। বই ইস্যু বা ফটোকপি করার প্রক্রিয়া আরও শিক্ষার্থীবান্ধব করা দরকার। কলা পাঠকক্ষসহ অন্যান্য পাঠকক্ষের সংস্কার প্রয়োজন বলেও মত দেন তারা।
ওয়েবেই আছে ৪ লক্ষাধিক বইয়ের খোঁজ : চবি লাইব্রেরিয়ান
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওয়েবসাইটেই রয়েছে লাইব্রেরির চার লক্ষাধিক বই ও জার্নালের তালিকা। লাইব্রেরিতে এসে কষ্ট করে লাইন
ধরে বইয়ের নাম খোঁজার দরকার নেই। এর পরিবর্তে, বাসায় বসে নিজের স্মার্টফোন বা অন্য কোনো ল্যাপটপ বা কম্পিউটার থেকে কাঙ্খিত বইয়ের নাম জেনে আসলেই হবে। এক লহমায় তিনি বই পেয়ে যাবেন।’
কথাগুলো বলছিলেন চবি’র ভারপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ আবু তাহের।
লাইব্রেরিকে যুগোপযোগী করতে এক বা একাধিক দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।লাইব্রেরিতে কর্মচারি সংকট চরমে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ১৮টি পদ খালি আছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পদপূরণ হলেও অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’
‘লাইব্রেরি খোলা থাকে পাঁচটা পর্যন্ত, কিন্তু বই খোঁজার জন্য নির্ধারিত কম্পিউটার সেকশন বেলা তিনটার পর বন্ধ হয়ে যায় কেন?’জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জনবলের অভাবে কম্পিউটার সেকশন ওই সময়ের পর খোলা রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’
এছাড়া কলা পাঠকক্ষের স্যাঁতসেঁতে মেঝের কারণে বই-পত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মেঝে সংস্কারের জন্য লিখিতভাবে প্রকৌশল দপ্তরকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
‘লাইব্রেরির ব্যবহারে উদ্দীপনা দরকার’
লাইব্রেরির ব্যবহার নিয়ে প্রথম বর্ষেই শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও উদ্দীপনামূলক কর্মসূচির আয়োজন দরকার বলে মত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা মাহমুদ পাপিয়া। তিনি বলেন, লাইব্রেরি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় ও কেনো লাইব্রেরিতে যাওয়া প্রয়োজন তা নিয়ে উদ্দীপনামূলক অনুষ্ঠান হতে পারে। আর এ দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরই নেয়া উচিত।
‘ক্লাস লেকচারের সফট কপি পাই, তাই লাইব্রেরি যাই না’
নিয়মিত লাইব্রেরিতে যান না বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউর রহমান। ‘কেন যান না?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে যাওয়ার সময় হয়ে ওঠে না। তাছাড়া, শিক্ষকরা তাঁদের সিলেবাসভিত্তিক বইয়ের সফট কপি ও হার্ড কপি ক্লাসেই সরবরাহ করেন। তাই লাইব্রেরি ব্যবহারের তেমন প্রয়োজন পড়ে না।’
তবে ভাল করার জন্য লাইব্রেরিতে যাওয়া দরকার, বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী।
- চবির আইসিটি সেল : প্রযুক্তির ছোঁয়ায় লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমছে
- সাংবাদিক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি
- Nazrul’s 120th birth anniversary celebrated at CU
- Video Game Violence
- চবিতে বসেছে আলোর মেলা!!!
- ২০১৮ সালে ১৯৬৪২ টি অগ্নিকান্ডে ক্ষতি ৩৮৬ কোটি টাকা
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কফি হাউজ
- অর্থায়নে পিএইচপি ফ্যামিলি
চবি সাংবাদিকতায় নতুন স্টুডিও - চবির সাংবাদিকতা বিভাগের বিদায়ী সংবর্ধনা রোববার
- 85.7% students satisfied with CAJCU
- ডয়েচে ভেলের উদ্যোগে ‘মোবাইল জার্নালিজম’ শীর্ষক কর্মশালায় অংশগ্রহণ
- চবিতে ডিজিটাল সাংবাদিকতা বিষয়ক নেটওয়ার্কিং সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- গণমাধ্যম বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন
ইতিহাস গড়লো চবি - ৫২ বছরে মাত্র চার সমাবর্তন চবি-তে!
- ঝর্ণা-ফোয়ারায় সৌন্দর্য বাড়ছে চবি’র
- চবি শিক্ষার্থীদের দুঃখ রাতের শাটল ট্রেন
- চবি’র জীববৈচিত্র্যে ৩ দশকে বেড়েছে ৩৪৯ প্রজাতি
- CUCSU becomes functional again, desire all
- প্রথমবারের মতো নিজস্ব অটোমেশন
চবিতে ভর্তি পরীক্ষা ২৭-৩১ অক্টোবর - গণতন্ত্র ও জাতীয় উন্নয়নে মুক্ত সাংবাদিকতা অপরিহার্য
- কাজ করো, ফল তোমাদের পিছনে দৌঁড়াবে: উপাচার্য
- চবির সম্মৃদ্ধ লাইব্রেরি, তবুও বিমুখ শিক্ষার্থীরা!
- নতুন পরিসর-এ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
- হার না মানা শিলা