চট্টগ্রাম, রবিবার ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

Porisor banner

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কফি হাউজ

পরিসর.কম

প্রকাশিত : ০৮:১০ এএম, ৪ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৮:১৯ এএম, ৪ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কফি হাউজ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কফি হাউজ

২০০৮ সালে যখন দেশজুড়ে সেনা শাসনের জরুরি অবস্থা তখন তিনি আগষ্ট ছাত্র বিদ্রোহে তুলে দিয়েছিলেন তার রান্নার চুলার জন্য কেনা কাঠ।

যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ে, না পড়িয়ে,  খোদ বিশ্ববিদ্যালয়েই হাজার শিক্ষার্থীর শাসনকর্তা! যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো ঘটনার সাক্ষী।

হ্যাঁ,  তিনি হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের "মউর দোয়ান"(মামার দোকান) এর স্বত্বধিকারী  গুরু মিয়া সওদাগর ওরফে মউ(মামা)। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে সবাই মউ নামেই চিনে।

 

তার নাম যে গুরু মিয়া কেউ জানতো  না, যদি গত ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করতেন।

কে এই মউ?  সামান্য একজন সওদাগর হয়ে, তার পরলোক গমনে কেন  হাজারো শিক্ষার্থীর চোখে পানি আসলো? কারণ আছে!

বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে যখন কোনো বিশৃঙ্খলা দেখতো তখন তিনি নির্ভয়ে সেখানে যেতেন।  তিনি বিশ্বাস করতেন তাকে কেউ কটু কথা বলবে না, এবং  বলার কেউ সাহসও করতো না। তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেননি কিন্তু তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয় আর মানুষকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে হয়।

হাজারো প্রেমিক যুগল  বন্ধি হয়েছিল তার দোকানে।

 

 শত শত কাব্য রচিত হয়েছিল তার দোকানে। রাজনীতির টকশো বসতো তার দোকানে। টেবিলের আওয়াজ,আর  গিটারের বাজনায় সব সময় মেতে থাকতো মউয়ের দোকান। কোনোদিন কাউকে কিছু বলেননি। উল্টো  সবার সাথে নিজেও উপভোগ করতেন।

 সবাইকে" তুই" বলে সম্মোধন করতেন। কাউকে কোনোদিন শক্ত কথা বলেননি। যখন কেউ টাকা দিতে পারতো না তখন তিনি বলতেন " কখনো বড় অইলি, টীয়া পয়শা অইলি দিই যাইচ( কখনো বড় হলে, টাকা পয়সা হলে দিয়ে যাস)।

 

 সাদারঙের শার্ট ,  হাতে  হাত ঘড়ি ,  সাথে সাদা লুঙি পরিহিত  সাদাসিধে এ  মানুষটির মৃত্যুর খবরে শুনে আবেগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। অবচেতন মনেই চোখের জল  টলমল করে।

আজ তার হাতের শিঙ্গারা খাওয়া শিক্ষার্থী ডক্টরেট ডিগ্রিধারী,  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং নোবেল বিজয়ী। কী করে ভুলে তাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়!

তাইতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কফি হাউজ খ্যাত সে মউর দোয়ান( মামার দোকান) স্থান করে নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে।

আজ তার দোকান আছে। তার চেয়ার টেবিল আছে কিন্তু তিনি নেই। তিনি বেচে  না থাকলে কী হবে প্রতিটা শিক্ষার্থীর অন্তরে তিনি বেচে আছেন। 

তাইতো চট্টগ্রাম  বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর সকালটা শুরু হয় মউর দোকানের শিঙ্গারা দিয়ে বিকালটাও শেষ হয় মউর দোকানের শিঙ্গারা দিয়ে।

ভালো থাকুক মউ। আরো আলোড়ন ছড়িয়ে দিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কফি হাউজ।

 

তারেক হোসাইন

২৩ তম ব্যাচ